বঙ্গবাসীর রক্তে বাংলা দখল করতে চাইছে বিজেপি : জনসভায় অভিষেক বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়

14th April 2021 12:12 am বর্ধমান
বঙ্গবাসীর রক্তে বাংলা দখল করতে চাইছে বিজেপি : জনসভায় অভিষেক বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :  শীতলকুচিতে পাঁচজন বঙ্গবাসীকে গুলিকরে মারল কেন্দ্রীয় বাহিনী। কারণ তারা দিল্লীর শক্তির কাছে তারা মাথা নত করেনি,বশ্যতা স্বীকারও করেনি। যারা ভাবছে বাংলার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে বাংলার মানুষের রক্তের বিনিময়ে জোর করে বাংলা দখল করবে তাদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের একাধিক নির্বাচনী জনসভা থেকে দলের কর্মী ও সমর্থকদের এই কথাই জানিয়ে দিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয়  সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, বাংলায় ফের  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার গড়তে চলেছেন।মমতা বাংলার সম্মান কিছুতেই  দিল্লির কাছে বিক্রি করবেন না । এদিন খণ্ডঘোষ, রায়না ও কালনা বিধানসভার বৈদ্যপুরে পরপর তিনটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।পূর্ব বর্ধমান জেলার একাধীক আশনে প্রতিদ্বন্দী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা এইসব জনসভায় উপস্থিত থাকেন ।  জনসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়    আগাগোড়াই মোদী, অমিত শাহ সহ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে শুর  চড়ান । তিনি বলেন, বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের সুবিধা করে দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন বাংলায় আট দফায় নির্বাচন করছে। প্রথম দফা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের মায়েরা ওই দলটার  হাত ভেঙে দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বাংলার জনগণ ওদের পা ভেঙে দিয়েছে। আর তৃতীয় ও চতুর্থ দফার ভোটে আমি ওদের মাজার ও কোমর ভেঙে দিয়েছি। পঞ্চম দফার নির্বাচনে পূর্ব বর্ধমান বাসিকে ওদের ঘাড় আর  মাথা ভাঙতে হবে। এরপর ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম দফার নির্বাচনে ওদের যেটুকু দম্ভ , অহংকার ও ঔদ্ধত্য থাকবে সেটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়ে বিশ্বাসঘাতক বহিরাগতদের বাংলা থেকে বিদায় দিতে হবে বলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন।নির্বাচনী জনসভা থেকে নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও শুর  চড়ান।তিনি বলেন, একদিনের জন্য নির্বাচনী প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গ তুলে ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ,
প্রথমে চক্রান্ত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পা ভাঙ্গা হলো। তারপর এজেন্সি দিয়ে ধমকানি, চমকানি তো রয়েইছে। তাতেও কাজ হলো না। এরপর চতুর্থ দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে গুলি চালিয়ে পাঁচজন রাজবংশী কে হত্যা করা হলো। এ পর  মুখ্যমন্ত্রী তার রাজ্যের ওইসব এলাকার মানুষ জনের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তারও অনুমতি মিলল না। তাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। এখন প্রচারে অংশগ্রহণে জারি হল নিষেধাজ্ঞা । এর পরেই অভিষেক বলেন, ২০০ আশন পার করে ফেলবেন বলছেন তাসত্ত্বেও মোদি, অমিত শাহের এত ভয় কিসের। একজন মহিলার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে বিজেপির সবার  নাড়িভুড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। বিজেপির তাবড় নেতাদের লেজেগোবরে অবস্থা হয়ে গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়তে গিয়ে। গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, অসম ,উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি থেকে  ওদের  নেতারা এখন ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করছে বাংলায়। অথচ করোনাকালে, আমফানের সময়ে এই সব বিজেপি নেতাদের কাউকে বাংলায় চোখেই দেখা যায়নি। শীতলকুচির ঘটনা প্রসঙ্গ তুলে ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, চতুর্থ দফার ভোটে বেলকুচিতে ৫ জন  বঙ্গবাসী কে গুলি করে মারল কেন্দ্রীয় বাহিনী। যাদের হত্যা করা হলো তাদের দোষ ছিল তারা বাংলার গরিব লোক। তারা দিল্লির কাছে মাথা নত করেনি। তারা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছিল। দিল্লির শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেনি,বশ্যতা স্বীকার করেনি বলেই তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে অভিষেক দাবি করেন ।  জনসভায় উপস্থিত মানুষজনের  কাছে অভিষেক  প্রশ্ন রাখেন ,যারা বঙ্গবাসীর রক্তে বাংলা দখল করতে চাইছে তাদের আপনারা ক্ষমা করবেন? অভিষেক নিজেই  জানিয়ে দেন  বহিরাগতদের যোগ্য জবাব দিতে হবে। যারা বাংলার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে জোর করে বাংলা দখল করতে চাইছে  তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার কথা জনসভায় উপস্থিত মানুষজনকে বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েদেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সম্মান দিদির কাছে  কিছুতেই বিক্রি করবেন না। করণা সংক্রমণ বেড়ে চলা নিয়েও জনসভা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন এখনো করোনা গ্রাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশে কদিনেই ১ লক্ষ ৭০ হাজার কেস হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও দেশের সকল বাসিন্দাদের করোনার ভ্যাকসিন না মেলা নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এদিন  তোপ দাগেন  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন দেশে ১৩০ কোটি মানুষ থাকলেও কেন্দ্রে মোদি সরকার ভ্যাকসিন দিয়েছে মাত্র ১ কোটি। অথচ বিদেশে পাঠিয়েছে ১০ কোটি ভ্যাকসিন। নিজের দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে মোদি সরকার বাংলাদেশ পাঠিয়েছে ৫০লক্ষ, নেপালে পাঠিয়েছে ৩০ লক্ষ ও পাকিস্তানের পাঠিয়েছে ৫০  লক্ষ ভ্যাকসিন। এছাড়াও ভুটান ,শ্রীলংকা, মার্কিন ,যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। এর থেকেই পরিষ্কার  হয়ে যাচ্ছে এই দেশের মানুষের জীবনের কোন মূল্য কেন্দ্রের মোদি সরকারের কাছে নেই। এইসব করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার শুধু চায় সারা পৃথিবী জুড়ে মোদির ঢাকঢোল পেটাতে। এরই পাশাপাশি অভিষেক বলেন ,দিদির প্রতিশ্রুতি চোখে দেখা যায়। কিন্তু মোদির প্রতিশ্রুতি আসলে ভাঙ্গা অডিও ক্যাসেট। যা চোখেও দেখা যায় না কানেও শোনা যায় না। পাশাপাশি নির্বাচনী জনসভা থেকে অভিষেক জানিয়েদেন ,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের ১ কোটি ৬০ লক্ষ পরিবারের জন্য ’ন্যূনতম মাসিক আয়’ প্রকল্প রাজ্যে চালু হবে। এই প্রকল্পে সাধারণ গৃহস্থ পরিবারের মহিলারা প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন।  আর তপশিলি জাতি ও উপজাতি পরিবারের মহিলারা পাবেন মাসে ১ হাজার  টাকা করে। এছাড়াও রাজ্যের ৬৮ লক্ষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী যারা এখন ’কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের ৫ হাজার  টাকা করে পান তারা ১ জুন থেকে ১০ হাজার  টাকা করে পাবেন বলে অভিষেকে এদিন জনসভায় উপস্থিত মানুষজনকে জানিয়ে দেন। তৃণমূল কংগ্রেসের যুব রাজের মুখ থেকে এই ঘোষনার কথা শুনে 
জনসভায় উপস্থিত মানুষজন বিশেষত মহিলারা উচ্ছাসে ফেটে পড়েন ।





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।